পশ্চিমবঙ্গের GI ট্যাগ প্রাপ্ত পণ্য : পশ্চিমবঙ্গ, তার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং বৈচিত্র্যময় হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এই রাজ্যের অনেক পণ্য ভূগোলগত নির্দেশক (GI) ট্যাগ পেয়েছে, যা পণ্যের উৎপত্তি অঞ্চল, গুণগতমান এবং খ্যাতির স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করে। GI ট্যাগ শুধু একটি লেবেল নয়, এটি ঐতিহ্য ও স্বকীয়তার সম্মান। বাংলার এমন অনেক পণ্য রয়েছে যেগুলোর পরিচিতি আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই GI ট্যাগের মাধ্যমে।
প্রথমেই বলতে হয় ‘শান্তিনিকেতনি কাঁথা’ – বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনের মহিলাদের হাতে তৈরি এই সূক্ষ্ম কারুকাজের কাঁথা এখন সারা পৃথিবীতে পরিচিত। এরপর আছে ‘নকশিকাঁথা’, যা একাধারে ব্যবহার্য বস্ত্র ও শিল্পকর্ম। এটি গ্রামীণ নারীদের সৃজনশীলতার প্রতীক, যেখানে প্রতিটি সেলাই এক একটি গল্প বলে। ‘বালুচরি শাড়ি’ মুর্শিদাবাদের এক গর্ব, যা রাজকীয় নকশা এবং পৌরাণিক কাহিনী ভিত্তিক বুননে বিখ্যাত। একইভাবে ‘ধনেখালি শাড়ি’ এবং ‘তাঁত শাড়ি’ হুগলি ও নদিয়ার বিশেষত্ব বহন করে। এগুলো বাংলার তাঁতিদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
Read More : পৃথিবীর বৃহত্তম ক্ষুদ্রতম উচ্চতম দীর্ঘতম PDF
‘মুকুন্দপুর মাটির পুতুল’ এবং ‘কৃষ্ণনগরের মাটি দিয়ে তৈরি প্রতিমা ও পুতুল’ বাংলার লোকশিল্পের অনন্য নিদর্শন। প্রত্যেকটি পুতুলের মধ্যে এক ধরনের প্রাণ থাকে, যা শিল্পীর স্পর্শে জীবন্ত হয়ে ওঠে। আবার, ‘মাদুর’ বা ঘাস দিয়ে তৈরি চাটাই দক্ষিণ ২৪ পরগনার নারীদের হস্তশিল্পে এক অন্যতম পরিচয় বহন করে। ‘বাঁকুড়ার ঘোড়া’, কেবল একটি মাটির মূর্তি নয়, এটি বাংলার প্রতীক। এর ছিমছাম গড়ন এবং অলংকরণ এই ঘোড়াকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে। এটি শুধু শোভাবর্ধন করে না, বাংলার লোকশিল্পের শক্তিকে তুলে ধরে। {পশ্চিমবঙ্গের GI ট্যাগ প্রাপ্ত পণ্য}
‘জয়নগরের মোয়া’ শীতকালে বাঙালির ঘরে ঘরে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। কানকচুর গুড় এবং খেজুরের গুড় মিশিয়ে তৈরি এই মিষ্টি শুধু স্বাদের দিক থেকে নয়, আবেগের দিক থেকেও অনন্য। এটি এমন একটি পণ্য যা নির্দিষ্ট অঞ্চলের জলবায়ু ও কাঁচামালের উপর নির্ভর করে, ফলে এটি শুধুমাত্র জয়নগর ও তার আশেপাশের এলাকায় তৈরি হয়। ‘দার্জিলিং চা’ গোটা বিশ্বের স্বাদপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে। এর সুবাস, স্বাদ এবং হালকা গড়ন একে একান্তই অনন্য করে তোলে। এটিই ভারতের প্রথম GI ট্যাগ প্রাপ্ত পণ্য এবং এখনও বিশ্বের অন্যতম সেরা চা হিসেবে স্বীকৃত।

এছাড়াও রয়েছে ‘মালদার ল্যাংড়া আম’, ‘হিমসাগর আম’, ‘খেজুর গুড়’, ‘রাধানগর লেবু’ – প্রতিটি পণ্য তার স্বকীয়তা এবং ভূগোলগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এই স্বীকৃতি লাভ করেছে। এগুলোর উৎপাদন পদ্ধতি, স্বাদ এবং গন্ধ নির্দিষ্ট অঞ্চলের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। পশ্চিমবঙ্গের GI ট্যাগ প্রাপ্ত এইসব পণ্য শুধু অর্থনৈতিক মূল্য বহন করে না, এরা রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও কৃষকের পরিশ্রমের স্বীকৃতিও বহন করে। প্রতিটি ট্যাগ মানে একটি গল্প, একটি ইতিহাস, একটি পরিচয় – বাংলার মাটির গন্ধ মিশে থাকা এক একটি অহংকার। এছাড়াও আপনারা আমাদের WhatsApp বা Telegram গ্রুপে যুক্ত গিয়ে থাকতে পারে। সেখানে আমরা এরকমই নিত্য নতুন মক টেস্ট ও জেনারেল নলেজ ইত্যাদির নোটস সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পেয়ে যাবেন। এছাড়াও অব্যশই ফলো করে রাখুন www.disari.in ।
পশ্চিমবঙ্গের GI ট্যাগ প্রাপ্ত পণ্য
GI ট্যাগ প্রাপ্ত পণ্য | ক্যাটেগরি | সাল |
---|---|---|
দার্জিলিংয়ের চা | কৃষি | 2004 |
শান্তিনিকেতনের চামড়ার বস্ত্র | হস্তশিল্প | 2007 |
নকশি কাঁথা | হস্তশিল্প | 2008 |
মালদার ফজলি আম | কৃষি | 2008 |
লক্ষণভোগ আম | কৃষি | 2008 |
হিমসাগর আম | কৃষি | 2008 |
শান্তিপুরী শাড়ি | হস্তশিল্প | 2009 |
ধনিয়াখালি শাড়ি | হস্তশিল্প | 2011 |
বালুচরী শাড়ি | হস্তশিল্প | 2012 |
জয়নগরের মোয়া | খাদ্য শিল্প | 2015 |
কলকাতার রসগোল্লা | খাদ্য শিল্প | 2017 |
বর্ধমানের সীতাভোগ | খাদ্যশিল্প | 2017 |
বর্ধমানের মিহিদানা | খাদ্যশিল্প | 2017 |
গোবিন্দভোগ চাল | কৃষি | 2017 |
তুনাইপঞ্জি চাল | কৃষি | 2017 |
বাংলার পটচিত্র | হস্তশিল্প | 2018 |
মাদুর কাঠি | হস্তশিল্প | 2018 |
ডোকরা শিল্প | হস্তশিল্প | 2018 |
পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ | হস্তশিল্প | 2018 |
বাঁকুড়ার পাঁচমুরার টেরাকোটা ঘোড়া | হস্তশিল্প | 2018 |
কুশমান্ডির কাঠের মুখোশ | হস্তশিল্প | 2018 |
সুন্দরবনের মৌবান মধু | কৃষি | 2024 |
টাঙ্গাইল, গরদ এবং গড়িয়াল শাড়ি | হস্তশিল্প | 2024 |
উত্তরবঙ্গের কালো নুনিয়া চাল | কৃষি | 2024 |
নলেন গুড়ের সন্দেশ | খাদ্যদ্রব্য | 2025 |
কামারপুকুর এর সাদা বোঁদে | খাদ্য শিল্প | 2025 |
মুর্শিদাবাদের ছানাবড়া | খাদ্য শিল্প | 2025 |
বিষ্ণুপুরের মতিচুরের লাড্ডু | খাদ্য শিল্প | 2025 |
রাধুনী পাগল চাল | কৃষি | 2025 |
বারুইপুরের পেয়ারা | খাদ্য শিল্প | 2025 |
মালদার নিস্তারি সিল্ক সুতো | হস্তশিল্প | 2025 |
Read More : পৃথিবীর বিভিন্ন গতি, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ