Khudiram Bose Biography : আজকে “সফলতার দিশারী” তার সমস্ত ভিউয়ারদের জন্য নিয়ে এলো ক্ষুদিরাম বসুর একটি বিস্তারিত জীবনী। যেটা ক্ষুদিরাম বসু সমন্ধে বিভিন্ন জায়গায় ছোট বড় নানা রকম বক্তব্য দেওয়ার জন্য অত্যন্তভাবে উপকারী হবে।
Khudiram Bose Biography

এক নজরে
আজকের আমাদের এই প্রতিবেদনটিতে ক্ষুদিরাম বসু একদম জন্ম থেকে তার আত্ম বলিদান ও তার পরবর্তী সময়কার বিভিন্ন ছোট বড় ঘটনা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা রয়েছে। তাহলে আজকের প্রতিবেদনটি দেখে নিন। (ক্ষুদিরাম বসুর জীবনী)
ক্ষুদিরাম বসুর জীবনী
“একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,
হাসি হাসি পরব ফাঁসি
দেখবে ভারতবাসী।
আমি হাসি হাসি পরব ফাঁসি
দেখবে ভারতবাসী
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
ক্ষুদিরাম বসু হলেন উনিশ শতকের বাঙালি তরুণ বিপ্লবীদের মধ্যে প্রধান একটি নাম। দেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন বাংলার প্রচুর তরুণ প্রজন্ম। তাদেরই মধ্যে অন্যতম একজন তরুণ বিপ্লবী হলেন ক্ষুদিরাম।
আরও পড়ুন : ভারতের চন্দ্র অভিযানের গৌরবময় ইতিহাস
তার সৎ সাহস, ঐকান্তিকতা,ব্রিটিশদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার ক্ষমতা, প্রবৃত্তি সবাইকে বিস্মৃত করেছিল তখনকার দিনে। ক্ষুদিরাম বসুর বিশদ জীবনী সম্বন্ধে আলোচনা করতে গেলে আমাদের এখানে অবশ্যই নানারকম তার বৈপ্লবিক কার্যধার, তার শৈশব জীবন, শিক্ষাজীবন, পারিবারিক জীবন ইত্যাদি অবশ্যই জানতে হবে। তাহলে ক্ষুদিরাম বসে সম্বন্ধে বিস্তারিত দেখে নিন এবার। (Khudiram Bose Biography)
শৈশব ও পরিবার জীবন :-
জন্ম ও পরিবার :
ক্ষুদিরাম বসু 1889 সালের 3 ডিসেম্বর এই বাংলার মেদিনীপুর জেলার কেশপুর থানার অন্তর্গত মোহবনি নামক একটি ছোট্ট গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
তার পিতা ছিলেন ত্রৈলক্যনাথ বসু , যিনি পেশায় ছিলেন একজন তহশীলদার এবং তার মাথা ছিলেন লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী, যিনি একজন ধর্মপরায়না গৃহিণী ছিলেন । ত্রৈলোক্যনাথ বসু এবং লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর চতুর্থ সন্তান ছিলেন ক্ষুদিরাম।
আরও পড়ুন : ভারতের ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেল বাংলা
ক্ষুদিরাম যেহেতু চতুর্থ সন্তান ছিল তার বাবা-মায়ের তার আগে যে তিন জন তার বোন ছিল, তারা খুব অল্প বয়সে মারা গিয়েছিলেন যার ফলে ক্ষুদিরামকে তার মাতা ও পিতা প্রচন্ড স্নেহ করতেন।
যদিও ক্ষুদিরামের প্রথমে নাম ক্ষুদিরাম ছিল না। এই ক্ষুদিরাম নামের পেছনে লুকিয়ে আছে আরো একটি ইতিহাস। তখনকার দিনে মানুষের সন্তান মারা যেত খুব বেশি।
আর যেহেতু ত্রৈলোক্যনাথ বসু এবং লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর আগে থেকেই 3 জন সন্তান মারা গিয়েছিল, তাই পরবর্তী সময়ে পত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তারা তখনকার সমাজে নিয়মানুযায়ী তাদের পুত্রকে লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর বড় বোন অর্থাৎ ক্ষুদিরামের মাসির কাছে তিনমুঠি খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে যেহেতু শিশুটিকে বিক্রয় করা হয়েছিল, তার জন্য পরবর্তীকালে ওই শিশুটির নাম রাখা হয় ক্ষুদিরাম। (Khudiram Bose Biography)
শৈশবকালীন জীবন :
শৈশবকাল কেটেছিল অত্যন্ত গ্রামীণ একটি পরিবেশে। তার পিতা-মাতা তাকে সমস্ত রকম ধর্মীয় এবং নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়েছিলেন, যেটা পরবর্তীকালে তার জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল।
আরও পড়ুন : ভারতের চন্দ্র অভিযানের গৌরবময় ইতিহাস
একদম ছোটবেলা থেকেই ক্ষুদিরাম অত্যন্ত সাহসী, উদ্যমী এবং একদম সত্যবাদী ছিলেন। যার ফলে তিনি তার বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন এবং প্রায়োরিটি নানারকম দুঃসাহসিক কাজের জন্য তার নাম আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে খুব কম বয়স থেকেই।
ক্ষুদিরাম বসু তার বড়দিদি, অপরুপা দেবীর ছত্রছায়ায় এবং স্নেহ ভালোবাসা বড় হতে থাকে। অপরূপা দেবীর স্বামীর যেহেতু বদলি চাকরি ছিল তার জন্য এক স্থান থেকে অন্যস্থানে বদলি হওয়ার পর ক্ষুদিরাম কেউ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হতো। ক্ষুদিরাম বসু তা প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছানোর আগে থেকেই একজন ডানপিটে, বাউন্ডুলে, রোমাঞ্চ প্রিয় হিসাবেও পরিচিত লাভ করেছিলেন ।
ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা :
ক্ষুদিরাম বসু তার মায়ের কাছ থেকে যে সকল ধর্মীয় শিক্ষা, দেশপ্রেমের শিক্ষা ইত্যাদি পেয়েছিলেন সেগুলি তার জীবনে পরবর্তীকালে প্রচুর কাজে দিয়েছিল।
শিক্ষাজীবন :-
প্রাথমিক শিক্ষা:
ক্ষুদিরামের প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর গ্রামের স্কুলে শুরু হয়। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং পাঠ্যবইয়ের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে আগ্রহী ছিলেন। তাঁর শিক্ষকরা তাঁকে খুব পছন্দ করতেন এবং তাঁর মেধা ও সাহসের প্রশংসা করতেন।
বিদ্যালয়ে পড়াশোনা :
ক্ষুদিরাম মেদিনীপুরের হ্যামিল্টন হাইস্কুলে ভর্তি হন। স্কুলজীবনেই তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ অনুভব করতে শুরু করেন। ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধাবী এবং তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলীর জন্য পরিচিত ছিলেন। (ক্ষুদিরাম বসুর জীবনী)
দেশপ্রেমিক চেতনার বিকাশ :
বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই ক্ষুদিরাম বিভিন্ন দেশপ্রেমিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণ শুরু করেন এবং তাঁর বন্ধুদের সঙ্গেও এই বিষয়ে আলোচনা করতেন। তাঁর প্রিয় বিষয় ছিল ভারতের ইতিহাস এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী বিদ্রোহ।
বিপ্লবী কার্যকলাপের শুরু :-
অনুশীলন সমিতি ও বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যোগদান :
ক্ষুদিরাম বসুর বিপ্লবী জীবনের সূচনা হয় অনুশীলন সমিতির মাধ্যমে। অনুশীলন সমিতি ছিল একটি গোপন বিপ্লবী সংগঠন, যা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করত। ক্ষুদিরাম কম বয়সেই এই সমিতির সদস্য হন এবং বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। (Khudiram Bose Biography)
বিপ্লবী কার্যকলাপ ও সশস্ত্র সংগ্রাম:
ক্ষুদিরাম ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এই সময়ে তিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের প্রচার চালান। ক্ষুদিরাম বিভিন্ন ধরনের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ শুরু করেন।
বিপ্লবী সংগঠন এবং অনুপ্রেরণা:
ক্ষুদিরাম বসু বিভিন্ন বিপ্লবী নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, যেমন – আরবিন্দ ঘোষ, বিপিন চন্দ্র পাল এবং বাল গঙ্গাধর তিলক। তাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেকে নিযুক্ত করেন।
মুজাফফরপুর ষড়যন্ত্র :-
কিংসফোর্ড হত্যার পরিকল্পনা:
ক্ষুদিরাম বসুর জীবনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল মুজাফফরপুর ষড়যন্ত্র। ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড ছিলেন একজন কুখ্যাত ব্যক্তি, যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর কঠোর শাস্তি দিতেন।
অনুশীলন সমিতি সিদ্ধান্ত নেয় যে কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে হবে। ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল চাকী এই পরিকল্পনার দায়িত্ব পান। (Khudiram Bose Biography)
হামলা ও এর ফলাফল:
১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল চাকী মুজাফফরপুরে কিংসফোর্ডের গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করেন। কিন্তু এই হামলায় কিংসফোর্ড বেঁচে যান এবং দুই ব্রিটিশ মহিলা নিহত হন। এই ভুলের জন্য ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল পালিয়ে যান।
গ্রেফতার ও আত্মসমর্পণ:
হামলার পর ক্ষুদিরাম মাইলের পর মাইল দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পরদিন সকালে পুলিশ তাকে মুফসফারপুরের কাছে এক রেলস্টেশন থেকে গ্রেফতার করে। প্রফুল্ল চাকী ধরা পড়ার আগে নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। (Khudiram Bose Biography)
চার ও মৃত্যুদণ্ড :-
বিচার প্রক্রিয়া:
ক্ষুদিরাম বসুকে আদালতে হাজির করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়। ক্ষুদিরাম নির্ভয়ে নিজের কর্মকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন এবং ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন। তার সাহসিকতা এবং দৃঢ়তার জন্য তিনি আদালত ও জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করেন।
ফাঁসি ও মৃত্যুর আগে সময়:
বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট তাকে মেদিনীপুর জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়। ফাঁসির দিন তিনি প্রায় নির্ভীকভাবেই মঞ্চে যান এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হন। তার মুখে ছিল এক আশ্চর্য হাসি, যা ব্রিটিশ শাসকদের চমকে দিয়েছিল। (Khudiram Bose Biography)
মৃত্যুর পর প্রতিক্রিয়া:
ক্ষুদিরামের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সারা ভারত জুড়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। তার সাহসিকতা ও আত্মত্যাগে তিনি একজন জাতীয় নায়কে পরিণত হন। দেশের বিভিন্ন স্থানে তার স্মরণে প্রতিবাদ মিছিল ও সভার আয়োজন করা হয়।
উত্তরাধিকার ও প্রভাব :-
স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রভাব:
ক্ষুদিরাম বসুর আত্মত্যাগ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে একটি নতুন উদ্দীপনা যোগায়। তার সাহসিকতা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিপ্লবী চেতনা জাগিয়ে তোলে এবং অনেকেই তার দেখানো পথে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। (ক্ষুদিরাম বসুর জীবনী)
জাতীয় চেতনার বিকাশ:
ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটায়। তার স্মরণে গান, কবিতা ও নাটক রচিত হয়, যা মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের ভাবনা জাগিয়ে তোলে।
স্মরণ ও সম্মান:
ক্ষুদিরাম বসুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে তার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। তার নামে রাস্তা, বিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৬৫ সালে ভারতীয় ডাক বিভাগ তার স্মরণে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
সমাজে প্রতিফলন:
ক্ষুদিরাম বসু আজও ভারতের যুবকদের মধ্যে স্বাধীনতার সংগ্রামে উৎসাহ জোগায়। তার আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
উপসংহার
ক্ষুদিরাম বসুর জীবন ও আত্মত্যাগ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার দৃঢ়তা, সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগ আজও আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়।
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অমর নায়ক হিসেবে তিনি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি যে স্বাধীনতা এবং অধিকার অর্জনের জন্য কীভাবে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। ক্ষুদিরাম বসু সত্যিই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। (Khudiram Bose Biography