কিভাবে “আমার সোনার বাংলা” বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো? ভারতের চাপে কী

কিভাবে আমার সোনার বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো : ওপার বাংলায় বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংগীত নিয়ে নানারকম বিরোধিতার খবর সামনে এসেছে। কখনো কখনো বলা হয়েছে “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” এই গানটাতে নাকি বাংলার কথা বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নয় !

WhatsApp Community Join Now
Telegram Channel Join Now
..
কিভাবে আমার সোনার বাংলা বাংলাদেশ জাতীয় সংগীত হলো
কিভাবে “আমার সোনার বাংলা” বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো? ভারতের চাপে কী

আবার অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তি বলেছেন এই গান বাংলাদেশের প্রধান সম্প্রদায় তথা ইসলামী মূল্যবোধ ও চেতনার সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে না।

কিভাবে আমার সোনার বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো?

তাহলে কি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের এই আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে ভারত জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিল? নাকি এর পেছনে অন্য কোনো গল্প রয়েছে ? “আমার সোনার বাংলা” – গানটি কিভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ওপার বাংলার লোকেদের কাছে গৃহীত হয়েছিল? সেই সম্বন্ধিত বিস্তারিত আলোচনা হবে “সফলতার দিশারী”র এর আজকের প্রতিবেদনে।

Add a subheading

বাংলাদেশের সেনার প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আজমি এক সাংবাদিক সম্মেলনে নির্দ্বিধায় জানিয়েছেন যে, আমরা কি দুই বাংলা এক হতে চাচ্ছি? আমরা কি স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে চাই? নাকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অঙ্গীভূত রাজ্য হতে চাই? আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছি, স্বাধীন বাংলাদেশে থাকতে চাই। এই জাতীয় সংগীত আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের রক্ষিতের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন : ভারতের ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেল বাংলা

আমি জোর দাবি জানাচ্ছি। এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আজমি এর আরো একটি পরিচয় হলো, তিনি বাংলাদেশের জামাতে ইসলামী দলের প্রাক্তন আর্মির তথা একাত্তরের গণহত্যার দায় সাজাপ্রাপ্ত গোলাম আজমের ছেলে।

এছাড়াও এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরও দাবি করেন ভারতের চাপে নাকি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার এই সংগীতটি গ্রহণ করেছিল অতীতে। কিন্তু এখন বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, সেখানকার জনগণের একটা বড় অংশ মনে করছে বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি ভারত জোড় করে চাপিয়ে দিয়েছিল তাদের ঘরে, সুতরাং অবশ্যই সেটিকে এখন বদলের প্রয়োজন।

কিভাবে "আমার সোনার বাংলা" বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ? ভারতের চাপে কী
কিভাবে “আমার সোনার বাংলা” বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ? ভারতের চাপে কী

চাপের মুখে পড়ে বাংলাদেশের বর্তমান ইউনুস সরকার জানিয়েছে জাতীয় সংগীত কোনো ভাবেই বদলানো হবে না। কিন্তু বর্তমানে মোহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ইসলামী মৌলবাদীদের প্রভাব যেভাবে দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে, তাতে তিনি জাতি সংগীত না বদলানোর পরিকল্পনা যে বেশিদিন রাখতে পারবে, সেটা নিয়ে মূলত সন্দেহ রয়েছে।

যেহেতু বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত একজন কবি লিখেছেন, তার জন্য ওপার বাংলায় বহুবার এই জাতীয় সংগীত বদলানোর কথা উঠেছে, কিন্তু কোনা বারই তারা সফল হতে পারেনি। এর আগে 2002 সালে জাতীয় সংগীত বদলানোর চেষ্টা করেছিল জামাতে ইসলামী। শুধু এটাও নয় এর পরবর্তীকালেও পদ্মা পারে বিভিন্ন সময়ে জাতিসংগীতের বিরোধিতা করা হয়েছে, কেননা সেটা একজন ভারতীয় কবির লেখা।

এই জাতীয় সংগীত বদলানোর পেছনে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে , এই গানের মাধ্যমে মূলত বাংলাকে তুলে ধরা হচ্ছে বাংলাদেশকে নয়। আবারো কখন কখন বিভিন্ন জায়গায় তর্ক হয়েছে, এই গান ইসলামী মূল্যবোধ ও চেতনা সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্য খাচ্ছে না। কেননা বাংলাদেশের সব থেকে বড় ধর্ম ইসলাম।

‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ – গানের ইতিহাস :

1905 সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে রোধ করার উদ্দেশ্যে মূলত এই গানটি রচনা করেছিলেন, যার কোনো পান্ডুলিপি নেই।

সুতরাং সঠিক পাণ্ডুলিপি না থাকার কারণে গান আদৌ যে গানটি ওই সময়ই রচনা হয়েছিল তার সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। পরবর্তীকালে কবি সত্যেন রায় তার লেখার মাধ্যমে জানিয়েছেন, 1905 সালে 7 আগস্ট কলকাতা টাউন হলে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রথমবার ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি গাওয়া হয়েছিল।

কিন্তু এদিকে আবার রবীন্দ্র জীবনীকার প্রশান্ত কুমার পাল দাবি করেছেন, গানটি ওই বছর 7 আগস্ট প্রথমবার গাওয়া হয়নি বরং সেটা 25 আগস্ট কলকাতা টাউন হলে প্রথম গাওয়া হয়েছিল। পরে ওই বছরই 7 সেপ্টেম্বর ‘সঞ্জীবনী’ নামক পত্রিকায় গানটি ছাপা হয় প্রথমবারের মতো। এই গানটি আবার বঙ্গদর্শন পত্রিকার আশ্বিন সংখ্যাতেও ছাপা হয়েছিল। গানটির সুর দেওয়া হয়েছিল মূলত ডাক পিয়ন গগন হরকরার ‘আমি কোথায় পাব তারে’ গানের সুরের ভিত্তিতে।

Untitled design 2

1905 সালে বঙ্গভঙ্গ বিভিন্ন আন্দোলন, প্রতিবাদী মিছিল, প্রতিবাদী গান ইত্যাদির মাধ্যমে থামানো গেলেও পরবর্তীকালে 1947 সালে আর শেষ রক্ষা হলো না। ভাগ হয়ে গেল বাংলা। তৈরি হল আরো দুটি নতুন দেশ, পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। ইসলামী মৌলবাদীদের মূল সমস্যা কিন্তু এই গানটি নিয়ে নয়, বরং গানটির লেখক তথা কবি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ, মুক্তমনা ও আধুনিক চেতনার কবি, ওনাকে নিয়েই তাদের যত সমস্যা। পূর্ব পাকিস্তানে আবার রবীন্দ্র চর্চার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল।

কিন্তু সরকারিভাবে এই গানটি কে নিষিদ্ধ করেও মানুষের মন থেকে তারা এই গানটির প্রভাব কোনো ভাবেই দূর করতে পারেনি। বাঙ্গালীদের মুখে প্রতিবাদের ভাষায় লুকিয়ে ছিল বিশ্ব কবি রবি ঠাকুরের এই “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” গানটি।

1952 সালে ভাষা আন্দোলনে নিহত সমস্ত ব্যক্তিদের স্মরণে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ঢাকা কলেজ সাংসদদের তরফ থেকে পরের বছর 1953 সালের 21 ফেব্রুয়ারি। ঢাকা কলেজ সংসদের সেই অনুষ্ঠানেও এই গানটি সমস্ত ছাত্রদের দ্বারা গাওয়া হয়েছিল, মৌলবাদী ইসলামী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা এটিকে কোনো ভাবেই আটকাতে পারেনি।

পরবর্তীকালে এই গানটি গাওয়ার জন্য সমস্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মুলক ব্যবস্থাও নিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ, কিন্তু আদৌ কি এটা করা উচিত ছিল? এ প্রশ্নটা বারবার উঠেছে নানা সময়ে। এরপরে 1953 এবং 1954 সাল নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের অভিষেক অনুষ্ঠানেও বর্তমান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি দেওয়া হয়েছিল।

1956 সালে বাংলাদেশের ঢাকায় পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশন বসে ছিল। সেখানে পশ্চিম পাকিস্তান তথা বর্তমান পাকিস্তান থেকে আসা সমস্ত সংসদ সদস্যদের সম্মানে বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক অনুষ্ঠান হয়েছিল।

সেখানে তৎকালীন বাংলাদেশের সব থেকে জনপ্রিয় জনদরদী নেতা তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসার সমস্ত গণপরিষদের সদস্যদের সামনে বাঙালি সংস্কৃতি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সেই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।

ওই অনুষ্ঠানে বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, নজরুল ইসলাম সহ আরো বিভিন্ন কবিদের গানের পাশাপাশি বাংলার লোকগীতি গাওয়া হয়েছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সঞ্জীদা খাতুন কে বর্তমান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তথা রবীন্দ্র সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি গাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

পরে এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে সঞ্জীদা খাতুন জানিয়েছিলেন যে, এই আমার সোনার বাংলা গানটি বাঙালি জাতিকে কতটা আবেগ প্রবণত করেছিল, সেটা পশ্চিম পাকিস্তানের সমস্ত গণপরিষদের সদস্যদের বোঝাতে ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অনুষ্ঠানে গানটি গাওয়া হয়েছিল।

পদে 1958 সাল নাগাদ পাক রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে দিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে। মূলত তিনি অসাম্প্রদায়িকতা, রবীন্দ্র সাহিত্য ও শিল্পকলা এবং বাঙালি সংস্কৃতির চর্চাকে রাষ্ট্রীয় চেতনার পরিপন্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।

এরপরে 1967 সাল নাগাদ রাষ্ট্রীয় রেডিওতে রবীন্দ্র সংগীত সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানের জোরে। এর ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ এর সমস্ত জনতা রাগ এবং ক্ষোপে গর্জে উঠেছিল।

এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় নানা রকম মিছিল, প্রতিবাদী সভা ইত্যাদি করেছিল। পরবর্তীকালে সেই প্রতিবাদের চাপের মুখে পড়েই নিষেধাজ্ঞাকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়, পশ্চিম পাকিস্তান এর সরকার।

পরবর্তীকালে 1969 সাল নাগাদ নাগার ঢাকাতে অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে আয়োজিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমরা রবীন্দ্রনাথের বই পড়বই, আমরা রবীন্দ্র সংগীত গাহিবই”, দেখি কে আমাদের আটকাতে পারে। ক্রমই মুক্তিযুদ্ধের আগেই শাসকের বিরুদ্ধে যে কোন আন্দোলন ও প্রতিবাদে আমার সোনার বাংলা গানটি ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত মানুষদের মুখে মুখে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘আমার সোনার বাংলা’ এর অবদান –

একাত্তরে পাক হানাদারদের বর্বরতার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে জাগ্রত করতে এবং স্বাধীনতার যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতে রবীন্দ্রনাথের গান হয়ে ওঠে পাথেয় ও মূল প্রেরণা।

অতঃপর 1970 সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাহিদুর রহিমকে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রেকর্ড করে সেটাকে প্রকাশ করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকেই দেখে দেখে বেজে উঠেছিল এই বিপ্লবী গানটি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তখন বাংলাদেশের বিভিন্ন রেডিও, টিভিতে এই গানটির রেকর্ড চালানো হয়েছিল।

পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে এই মুক্তিযুদ্ধের সময় দিকে দিকে সমস্ত স্বাধীনতাকামী ওপার বাংলায় মানুষজন এই গানটি গাড়িতে শুরু করে। 1971 সালে 3রা জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে তৎকালীন ছাত্রলীগ এবং শ্রমিক লিগের দ্বারা আয়োজিত এক জনসভার শেষে দুটি গান গাওয়া হয়েছিল,

যার মধ্যে একটি ছিল “ধনধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে পাবে দেশ এক সকল দেশের সেরা, স্বপ্ন দিয়ে তৈরি দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা” এবং অন্যটি হলো “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” । এর মধ্যে প্রথম গানটি রচনা করেছিলেন কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এবং দ্বিতীয়টি অবশ্যই কবিগুরু রবি ঠাকুর। সেটা তো আপনারা জানেনই।

তারপরেই তো মুক্তিযুদ্ধ সেখানেই পশ্চিম পাকিস্তান এর হাত থেকে পূর্ব পাকিস্তান সম্পূর্ণভাবে মুক্তি লাভ করে এবং পূর্ব পাকিস্তানের নতুন নাম দেওয়া হয় বাংলাদেশ । ওই বছরই অর্থাৎ 1971 সালেই মুজিব নগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়েছিল এবং সেটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে তৎকালীন বাংলাদেশের সরকার গ্রহণ করেছিল।

তবে স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এই গানটি বাংলাদেশের পাকাপোক্ত তথা স্থায়ী জাতীয় সংগীত হিসেবে জায়গা করে পারেনি ? এই না পারার পেছনেও রয়েছে এক দুর্দান্ত আকর্ষণীয় কাহিনী? সেটি তাহলে এবার দেখে নিন একটু। তাহলেই আপনারা ঘটনাটাকে একদম আগাগোড়া সম্পূর্ণটা বুঝতে পারবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চোখে জল :

স্বাধীনতার মাত্র এক বছর পরে তথা 1972 সালের 10 জানুয়ারি বিমানে করে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ ফিরছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেইখানেই বঙ্গবন্ধুর যাত্রা সঙ্গী হয়েছিলেন তৎকালীন ভারতীয় কূটনৈতিক শশাঙ্ক শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে এই শশাঙ্কশেখর “বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় সংগীত” একটি বই লিখেছিলেন। সেই বইয়ের সারসংক্ষেপে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘1972 সালের 9 জানুয়ারি তে লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি নিয়ে বিমানটি উড়ছে।

বঙ্গবন্ধু জানালা দিয়ে শ্বেতশুভ্র মেঘের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর গাইতে লাগলেন, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’। তার চোখে জল। তিনি বললেন ব্যানার্জী, আপনিও ধরুন। রিহার্সেল দিয়ে নেই। এরপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলে উঠলেন, এ গানটি হবে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।

কেমন হবে বলুন তো?” এর জন্য শশাঙ্কশেখর উত্তরে লিখেছিলেন “ইতিহাস সে তাহলে প্রথমবারের মতো দুটি দেশে জাতিসংগীতের লেখা পাবেন একজন ব্যক্তিই, তিনি হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ” এর পরবর্তীকালে সনজীদা খাতুন তার লেখা ‘জীবনের ভেলায় ভেলায়’ বইটিতে লিখেছেন ,“বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছি এই গানটা যখন শুনতেন তখন কেঁদে ফেলতেন।

1972 সালে বঙ্গবন্ধু লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয় স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায়। সেই বৈঠকেই মুক্তিযুদ্ধে গানটির ভূমিকা বিবেচনা করে কবিগুরু লেখা “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি” গানটির প্রথম 1টি পঙক্তি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচিত হয়।

এছাড়া দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় গীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সেই বৈঠকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন যে, “যে সুর গে এদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই সুরেই আমাদের জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে। জাতীয় সংগীত এর সুর হিসেবে মর্যাদা পাবে।

তারপর প্রথম এই আমার সোনার বাংলা গানটিকে বাংলাদেশে জাতীয় সংগীত হিসেবে বাতিল করার আনুষ্ঠানিক দাবি তুলেছিলেন জামাতে ইসলামীর প্রাক্তন আমির মতিউর রহমান নিজামী। 2002 সালে BNP জামাত সরকারের তিনি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী ।

তখনই আবার ওই ব্যক্তির সঙ্গে একই তালে তাল মিলিয়েছিলেন জামাত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ। তাদের দাবি ছিল যে “ইসলামী মূল্যবোধ ও চেতনার আলোয় জাতীয় সংগীত সংশোধন করতে হবে।” তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে তারা এক যৌথ সুপারিশপত্র জমা করেছিল এই নিয়ে।

কিন্তু খালিদা জিয়ার মন্ত্রীসভা সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। পরে 2019 সালে আবার আমাদের পশ্চিমবাংলার সারেগামাপা নামক বাংলার সবথেকে বড় সংবিধানুষ্ঠানের দ্বারা খ্যাত মইনুল আহসান নোবেল আবার বলেছিলেন যে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’

গানটিতে বাংলাদেশের কথা যতটা না প্রকাশ পায় তার থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তার থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি প্রকাশ পেয়েছে প্রিন্স মাহমুদের লেখা ‘বাংলাদেশ’ গানে। সারেগামাপার এই কন্টেপটেন্ট এর এমন কথাবার্তার জন্যেই দুই বাংলাতেই বেশ বিতর্ক হয়েছিল এই নিয়ে। পরে এই মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছিলেন সবার কাছে। কিন্তু এবারে আবারো উঠেছি বাংলাদেশ জাতীয় সংগীত বদলানোর কথা।

কিন্তু এই গান শুধু একটা গান নয়, বাংলাদেশ তো বটেই আমাদের পশ্চিমবাংলারও কোটি কোটি মানুষের মনে গেঁথে থাকা এক আবেগ, ভালোবাসা তথা শ্রদ্ধা। সেটা কি চাইলেই এভাবেই বদলে ফেলা যায়? ভাববার বিষয় কিন্তু এটা। কিন্তু যাই হোক আপাতত বাংলাদেশকে জাতীয় সংগীত বদলানো হচ্ছে না সেটা বলা যাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে বাংলাদেশে জাতীয় সংগীত কি বদলানো যেতে পারে? সেটা এখন দেখার বিষয়।

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now
..

Hello, I am S Mondal. I am working as a Bengali Senior Content Writer & Owner in সফলতার দিশারী" and Edusucess.com Website. I have an experience of 2 years on this Profession.Now I am trying to give my best effort on this Bengali Educational article site. Hope you like us. Feel free to leave a valuable comment and Star Mark for every news article Post. Thanks a lot for being with us

Sharing Is Caring:

Leave a Comment