Bengali Language :- দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দিয়ে এবার কেন্দ্রীয় সরকার সরকারিভাবে বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিল।
Bengali Language

এক নজরে
একজন বাঙালি হওয়ার জন্য আমরা অবশ্যই এর জন্য গর্ববোধ করব। এর আগে 2014 সালে উড়িয়া ভাষাকে শেষবারের মতো ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মারাঠি, পালি, প্রাকৃত, অসমিয়া ভাষার সঙ্গে এবার বাংলা ভাষাকেও দ্রৌপদী ভাষার স্বীকৃতি দিলেন। এর আগে সংস্কৃত, তেলেগু, মালয়ালাম, তামিল, কন্নড় ও উড়িয়া ভাষা এই স্বীকৃতি পেয়েছে বিভিন্ন সময়ে।

বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হলো – ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন যে, ‘আমাদের এই দেশের অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী তরফ থেকে নেওয়া এটা একটা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
আরও দেখুন : কলকাতার ট্রামের ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস 150 বছরের
মূলত প্রকৃত বৈজ্ঞানিক তথ্য, গবেষণা ও ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। শুধু বাংলা ভাষা বলি নয় ভবিষ্যতেও দেশের অন্যান্য সকল ভাষাগুলিকে দ্রৌপদী ভাষার মর্যাদা দিতে একই মাপদন্ড ব্যবহার করবে সরকার এমনটাও জানানো হয়েছে।
ভারত সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা
তারপর প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সামাজিক মাধ্যমে তার এক্স হ্যান্ডেল এ পোস্ট করে লিখেছেন যে, “আমি অত্যন্ত খুশি যে মহান বাংলাভাষাকে দ্রৌপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে আর তাও পবিত্র দুর্গা পুজোর সময়েই। বাংলা সাহিত্য অসংখ্য মানুষকে বছরের পর বছর ধরে অনুপ্রাণিত করে আসছে।। এই উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে সকল বাংলা ভাসাবাসি মানুষকে আমার তরফ থেকে অভিনন্দন জানাই”।

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ায় অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। যে খুশিটা তিনি তার এক্স হ্যান্ডেলে সবার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন।
ভারতের ধ্রুপদী ভাষা ঘোষণার মাধ্যম কী ?
ভারতে ধ্রুপদী ভাষা ঘোষণার মাপ দন্ড বিচার করার জন্য জাতীয় স্তরে সাহিত্য অ্যাকাডেমী ভাষা বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তারাই বিভিন্ন রকম মাপ দন্ডের ভিত্তিতে কোন ভাষা ধ্রুপদী, সেটা বিচার করে। তার সুপারিশ নিয়ে সরকারের কাছে জমা দেয়।
আরও দেখুন : ভারতের চন্দ্র অভিযানের গৌরবময় ইতিহাস
মূলত পাঁচটি বিষয়ের উপর এখানে বেছে নেওয়া হয় ধ্রুপদী ভাষাকে । সেই পাঁচটি বিষয় হলো –
- ওই ভাষা আর কমপক্ষে দেড় থেকে দুই বছরের ইতিহাস থাকতে হবে।
- প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে এসে এই ভাষায় কথা বলা বা লেখার ইতিহাস যেন যথোপযুক্ত থাকে।
- পদ্ম এবং গদ্য লেখার জল থাকতে হবে ওই ভাষায়।
- এছাড়াও শিলালিপি এর প্রমাণ থাকতে হবে ইতিহাসের পাতায়।
- ওই ভাষা ও সাহিত্যের বিবর্তন হতে হবে ও আগের ভাষার সঙ্গে বর্তমান ভাষার যোগ থাকবে।
এবার আমরা আলোচনা করব ধ্রুপদী ভাষার সুবিধা কি কি ? সেটা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কি প্রভাব ফেলে। তো তাহলে এবার দেখে নিন বিষয়টা –
ভারতে ধ্রুপদী ভাষা হওয়ার সুবিধা :
যদি কোন ভাষা ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পায় সরকারের তরফ থেকে, তাহলে ওই বাঁচাকে আরও বেশি ভালোভাবেই প্রচার ও প্রচার করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে তাকে কেন্দ্রীয় সরকার।
এদিকে আবার ধ্রুপদী ভাষার জন্যে জাতীয় পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ভাষার প্রচার ও প্রসারের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকতে হবে। এখন থেকে 4 বছর আগে 2020 সালে সংস্কৃত ভাষার জন্য তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছিল।

তামিল ভাষার প্রাচীন সমস্ত পুথি এর অনুবাদ করা ও গবেষণার জন্য কেন্দ্রীয় স্তরে বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করা হয়েছে। এদিকে আবার কন্নড়, তেলেগু, মালয়ালম, উড়িয়া ভাষার জন্যেও মহিশুরে Central Institute of Indian Languages নামক শিক্ষা ক্ষেত্রে তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে সবথেকে আলোচিত বিষয় হলো যে, ধ্রুপদী তার ভালো ভাষা কাজের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়ে থাকে।
শুরু হয়ে গেছে কৃতিত্ব নেওয়ার প্রতিযোগিতা : কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেই বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষায় মর্যাদা দেওয়ার পেছনে সবথেকে বড় কৃতিত্ব কার তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।
পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার এক্স হ্যান্ডেল এ পোস্ট করে জানিয়েছেন যে, ‘আমাদের দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে কেন্দ্রীয় সরকার তথা ভারত সরকার দ্রৌপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে, অনেক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে।
অনেকদিন ধরে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃত মন্ত্রণালয়ের কাছে এই সংক্রান্ত সমস্ত গবেষণালব্ধ বিপরীত তথ্য জমা দিয়ে দাবি করেছিলাম, যাতে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা ভাষাকে দ্রৌপদী ভাষার স্বীকৃতি বা মর্যাদা দেয়।
বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষায় মর্যাদা দেওয়ার ওপরে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন যে, ‘বাঙালি হিসেবে জন্মগ্রহণ করে আজ আমাদের গর্ব করার দিন। কেননা কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা ভাষাকে দ্রৌপদী ভাষার মর্যাদা দিয়ে দিয়েছে।
আপনারা জানেন সাহিত্য অ্যাকাডেমির অধীনে ভাষা বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। সে কমিটি তাদের সুপারিশ দিয়েছে ইতিমধ্যেই। কেন্দ্রীয় সে কমিটির ও সুপারিশের উপর ভিত্তি করেই বাংলা সহ আরো পাঁচটি ভাষাকে এবারে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হল। এর জন্য আমি সুকান্ত মজুমদার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার সমস্যার সদস্যকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’